শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১১:০৮ অপরাহ্ন
অনলাইন ডেস্ক: ভারতের শিল্পপতি রতন টাটা মারা গেছেন। গতকাল বুধবার রাতে ৮৬ বছর বয়সে ৩৮০০ কোটির সম্পত্তি রেখে মারা গেছেন তিনি। তার উত্তরসূরি কে হবেন প্রশ্ন উঠছে বিভিন্ন মহলে। ভারতের ধনকুবের রতন টাটা মুম্বাইতে জন্ম নেন ১৯৩৭ সালে। বুধবার (৯ অক্টোবর) রাতে মুম্বাইয়ের একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। দীর্ঘ জীবনকালে শিল্পপতি হিসেবে একের পর এক নজির গড়েছেন। তার ঝুলিতে রয়েছে ‘পদ্মভূষণ’ এবং ‘পদ্মবিভূষণ’ সম্মাননা। তথ্য বলছে, তিনি রেখে গেছেন ৩৮০০ কোটি রুপির সম্পত্তি। বিভিন্ন ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, টাটা ট্রাস্টের প্রাথমিক জনহিতকর অঙ্গসংস্থান স্যার দোরাবজি টাটা ট্রাস্ট এবং স্যার রতন টাটা ট্রাস্টের ট্রাস্টি হিসেবে লিয়া টাটা, মায়া টাটা এবং নেভিল টাটার নিয়োগকে সমর্থন করেছিলেন রতন টাটা। এ ট্রাস্টগুলো টাটা পরিবারের দাতব্য কাজে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করে। টাটা পরিবারের তরুণ প্রজন্ম বর্তমানে গ্রুপের পাঁচটি প্রধান জনহিতকর সংস্থায় বোর্ডের পদে রয়েছে। লিয়া টাটা, মায়া টাটা এবং নেভিল টাটা হলেন রতন টাটার সৎ ভাই নোয়েল টাটার সন্তান। নোয়েল টাটা হলেন রতনের বাবা নেভাল টাটা এবং সৎ মা সিমোনের সন্তান।
মায়া টাটা
৩৪ বছর বয়সি মায়া টাটা গ্রুপে উল্লেখযোগ্য অবস্থানে রয়েছেন। বেইজ বিজনেস স্কুল এবং ওয়ারউইক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী মায়া টাটা অপরচুনিটিজ ফান্ড এবং টাটা ডিজিটালের প্রধান ভূমিকা পালন করেছেন। টাটা নিউ অ্যাপ চালু করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন মায়া।
নেভিল টাটা
মায়া টাটা ছাড়াও আরও একজনের নাম শোনা যাচ্ছে। ৩২ বছর বয়সি নেভিল টাটা পারিবারিক ব্যবসার সঙ্গে ওৎপ্রোতভাবে জড়িত। টয়োটা কির্লোস্কর গ্রুপ পরিবারের মানসী কির্লোস্করের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন নেভিল। ট্রেন্ট লিমিটেডের অধীনে শীর্ষস্থানীয় হাইপারমার্কেট চেইন স্টার বাজারের প্রধান তিনি।
লিয়া টাটা
বয়সের দিক থেকে ৩৯ বছরের লিয়া টাটা সবার থেকে বড়। তিনি টাটা গ্রুপের হাসপিটালিটি সেক্টরে কাজ করেন। স্পেনের আইইতে পড়াশোনা করা লিয়া তাজ হোটেল রিসোর্টগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। বর্তমানে ইন্ডিয়ান হোটেল কোম্পানির কার্যকলাপ তিনি পরিচালনা করেন।
রতন টাটার চলে যাওয়া এক যুগের অবসান ঘটিয়েছে, কিন্তু এখন সকলের নজর তার উত্তরাধিকারীর দিকে। টাটা গোষ্ঠীর ভবিষ্যৎ কে পরিচালনা করবেন—নোয়েল, নেভিল, লিয়া, না মায়া? এই প্রশ্নের উত্তর নিয়ে চলছে জল্পনা, এবং খুব শিগগিরই আমরা জানতে পারব এই ঐতিহাসিক সাম্রাজ্যের পরবর্তী কর্ণধার কে হতে চলেছেন। প্রসঙ্গত, ১৯৩৭ সালের ২৮ ডিসেম্বর মুম্বাইয়ে পারসিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন রতন টাটা। বাবা নভল টাটার জন্ম গুজরাটের সুরাটে। পরে টাটা পরিবার তাকে দত্তক নেয়। রতন টাটার মা সুনি টাটা আবার সরাসরি জামশেদজি টাটার পরিবারের অংশ। রতন টাটার পিতামহ হরমসজি টাটা জন্মসূত্রেই ওই পরিবারের সদস্য। রতন টাটার যখন ১০ বছর বয়স, সেই সময় তার মা-বাবা আলাদা হয়ে যান। রতন টাটার নিজের এক ভাইও রয়েছেন, জিমি টাটা। সৎ ভাই নোয়েল টাটা। নভল টাটা দ্বিতীয়বার বিয়ে করেন সিমোন টাটাকে। নোয়েল তাদেরই সন্তান। ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে খুব একটা কথা বলতেন না রতন টাটা। তবে বেশ কবছর আগে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের সঙ্গে খানিকটা মন খুলে কথা বলেছিলেন তিনি। রতন টাটা বলেছিলেন, প্রেম করলেও বিয়ে করার সাহস আর পাননি।
কোনো না কোনো কারণ দেখিয়ে পিছু হটেছেন। প্রথম প্রেমিকা ছিলেন এক মার্কিন তরুণী। যুক্তরাষ্ট্রে তখন কাজ করতেন তিনি। প্রচণ্ড ব্যস্ততার মধ্যেও তার সঙ্গে ওই তরুণীর সম্পর্ক তৈরি হয়। কিন্তু তাকে বিয়ে করতে পারেননি। দ্রুত ভারতে ফিরে আসার কারণে সে সম্পর্ক পূর্ণতা পায়নি। ২০১১ সালে একটি সাক্ষাৎকারে রতন টাটা বলেছিলেন, তার জীবনে চার বার বিয়ের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নানা কারণে পিছিয়ে আসতে হয় তাকে। একাধিক সম্পর্কে জড়ালেও শেষ পর্যন্ত বিয়ের সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি রতন টাটা। তাই শেষদিন পর্যন্ত কুমার থেকে গেলেন। ছোটবেলা বাবা-মায়ের বিচ্ছেদই রতন টাটার মধ্যে বিয়ের ভীতি তৈরি করেছে বলে অনেকের ধারণা।